মুঠো মুঠো ব্যথার ওষুধ খাচ্ছেন? পেইনকিলার নিয়ে যে আশঙ্কার কথা জানাচ্ছে সরকার

Health Alert: মেফটাল নামক পেইনকিলার তথা ব্যথানাশক ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করল সরকার। ওষুধটির মূল উপাদান মেফেনামিক অ্যাসিডটি বেশ কয়েকটি অসুবিধার তৈরি করতে পারে শরীরে।

ব্যথাবেদনা হলে টুকটাক ব্যথার ওষুধ তো আমরা কমবেশি সকলেই মুখে পুরে দিই। তবে এই সব ব্যথার ওষুধ আদৌ আমাদের জন্য সুরক্ষিত তো? বড় কোনও ভুল করছি না তো আমরা। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি ড্রাগ সেফটি অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্ডিয়ান ফার্মাকোপিয়া কমিশন (আইপিসি)। মেফটাল নামক পেইনকিলার তথা ব্যথানাশক ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ওষুধটির মূল উপাদান মেফেনামিক অ্যাসিডটি বেশ কয়েকটি অসুবিধার তৈরি করতে পারে শরীরে। ইসিনোফিলিয়া ও সিস্টেমিক সিম্পটমস সিন্ড্রোমের শিকার হতে পারেন ব্যবহারকারী। তাছাড়া অসুবিধা তৈরি হতে পারে মেয়েদের ঋতুচক্রেও।

সাধারণ ভাবে রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, অস্টিওআর্থারাইটিস, ডিসমেনোরিয়া (মাসিক শুরুর আগের পেটেব্যথা ও ক্র্যাম্প)-র হাল্কা থেকে ভারী যন্ত্রণা, প্রদাহ, জ্বর ও দাঁতের ব্যথা সারাতে ব্যবহার করা হয় এই ধরনের মেফেন্যামিক অ্যাসিড যুক্ত পেনকিলার। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ফার্মাকোপিয়া কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা এই ওষুধটির ব্যপারে বিস্তর গবেষণা করেছেন। ফার্মাকোভিজিলেন্স প্রোগ্রাম অব ইন্ডিয়া (PvPI)-র ডেটাবেস থেকে জানা গিয়েছে, এই পেইনকিলারটির ব্যবহারে বেশিরভাগেরই ড্রেস সিন্ড্রোম দেখা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: কেন ঘুমের জন্য ওষুধের দরকার পড়ল মানুষের? অবাক করবে স্লিপিং পিল আবিষ্কারের ইতিহাস

এই ড্রেস সিন্ড্রোম আসলে কী? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ আসলে এক ধরনের অ্যালার্জি, যা বিশেষ কিছু ওষুধ ব্যবহারের ফলেই হতে পারে। দেখা দিতে পারে ত্বকের সমস্যা, ব়্যাশ, জ্বর এমনকী লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথির মতো ব্যাধিও। যেখানে শরীরের লিম্ফ নোডগুলির আকার বেড়ে যায় এবং প্রদাহজনীত সমস্যা দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওষুধটি খাওয়ার দুই থেকে আট সপ্তাহ পরে এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।

Painkiller Meftal can have adverse reactions, government issues alert Painkiller Meftal can have adverse reactions, government issues alert

ব্যথার ওষুধের ব্যবহার এ দেশে প্রচুর। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতেই এখন আর্থারাইটিসের সমস্যা। বয়স্কদের তো বটেই, এমনকী কম বয়সীদেরও জাপ্টে ধরছে এই রোগ। পায়ে ব্যথা, হাঁটতে অসুবিধা, কোমরে ব্যথার মতো একাধিক যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির হাত থেকে রেহাই পেতে আমাদের মুখে পুরে দিতে হয় পেনকিলার-জাতীয় ওষুধ। চিকিৎসকেরাও পরামর্শ দেন, এই ধরনের ওষুধগুলি খাওয়ার। শুধু কি আর্থারাইটিসের সমস্যা। অনেক মেয়েই পিরিয়ডস চলাকালীন অসহ্য পেটের যন্ত্রণা ও ক্র্যাম্পের শিকার হন। বহু সময়েই তাঁরা বাধ্য হন এই ধরনের ওষুধগুলো ব্যবহার করতে। যেগুলো আবার মাসিক ঋতুচক্রের জন্যই বহু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ডেকে আনে। অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত থেকে অনিয়মিত পিরিয়ডস, অনেক ধরনের অসুবিধাই তৈরি করতে পারে এই ধরনের পেইনকিলারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। মেফটালের মতো ওষুধের একটানা ব্যবহার আলসারেরও কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: এবার ওষুধেই সারবে ক্যানসার! ঐতিহাসিক আবিষ্কারের পিছনে কারা?

গত ৩০ নভেম্বর ইন্ডিয়ান ফার্মাকোপিয়া কমিশন (আইপিসি) মেফটাল নামক এই ব্যথানাশক ওষুধটি নিয়ে চিকিৎসক, ওষুধ বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের সাবধান করেছে। এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের ফলে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথাও বলা হয়েছে আইপিসি-র ওই নির্দেশিকায়। মফতল ড্রাগটি ব্যবহারের পর এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হলে আইপিসি-র ওয়েবসাইট www.ipc.gov.in বা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপ ADR PvPI এবং PvPI হেল্পলাইনের মাধ্যমে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানোরও অনুরোধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এর জন্য 1800-180-3024 হেল্পলাইন নম্বরও প্রকাশ করেছে কমিশন। ড্রেস সিন্ড্রোমের মতো লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে তা কমিশনকে জানানোর জন্যও চিকিৎসক, ওষুধবিক্রেতা ও ব্যবহারীদের কাছে আবেদন জানিয়েছে কমিশন।

More Articles